লকডাউনের জেরে আড়তে নেই সব্জীর দাম , মাথায় হাত শস‍্যগোলার সব্জী চাষীদের

15th April 2020 বর্ধমান
লকডাউনের জেরে আড়তে নেই সব্জীর দাম , মাথায় হাত শস‍্যগোলার সব্জী চাষীদের


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( জামালপুর ) :  লকডাউনের জেরে বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে রাজ্যের কৃষিক্ষেত্র ও কৃষিজীবী মহলে।বিপর্যস্ত রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষকরাও।জমিতে ফলানো লংকা,উচ্ছে ,কুমড়ো,পটল ,ঢেঁড়স প্রভৃতি সব্জি আড়তে নিয়ে গিয়ে তাঁরা এখন জলের দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।বহু টাকা খরচ করে যে সব চাষিরা সব্জী করেছিলেন তারা এই পরিস্থিতিতে চোখের জল ফেলা ছাড়া  আরকোন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।তাঁদের সকলের মুখে এখন শুধু একটাই কথা শোনা যাচ্ছে ,‘এমনটা চলতে থাকলে বিষপান করা ছাড়া চাষিদের  আর কোন উপায় থাকবেনা।’  

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সালিমডাঙ্গায় রয়েছে  জেলার অন্যতম বৃহৎ সব্জি আড়ত।  জামালপুর ছাড়াও রায়না,মাধবডিহি ও খণ্ডঘোষের বহু চাষি তাঁদের জমিতে উৎপাদিত সব্জি সালিমডাঙ্গার সব্জি আড়তে বিক্রি  করতে নিয়েযান। প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ টন সব্জির বিক্রিবাটা হয় এই আড়ত থেকে ।  একই ভাবে কালাড়াঘাটের পাইকারি  সব্জি বাজারেও প্রতিদিন সকালে সব্জি বিক্রি করতে আসেন বহু দূর দূরান্তের চাষি।লকডাউনের আগে পর্যন্ত কলকাতা, শেওড়াফুলি, উল্টোডাঙ্গা সহ আরো বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকেররা এখানকার আড়তে সব্জি কিনতে আসতেন।কেনা সব্জি মালবাহী গাড়িতে লোড করেনিয়ে  তাঁরা সেখানকার বাজারে  নিয়ে যেতেন। চাষিরাও লাভজনক দামে সব্জি বিক্রি করে হাঁসি মুখেই  বাড়ি ফিরে যেতেন।কিন্তু মারণ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দেশজুড়ে  লকডাউন জারি হতেই সবকিছুর উলোট পালট ঘটে গেছে।উধাও 
হয়েগেছে চাষিদের মুখের হাঁসি।

 
সালিমডাঙ্গার সব্জি আড়তে দেখা যায় বহু চাষি লংকা ,উচ্ছে ,পটল, কুমড়ো ,ঢেঁড়স প্রভৃতি সব্জি নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছেন।সেইসব সব্জি আড়তে নামিয়ে চাষিরা  আড়তদারের কাছে গিয়ে সব্জির দাম শোনার পরেই তাঁদের  মাথায় হাত পড়ে যায়। চাষিরা বলেন ,আড়তদাররা তাঁদের  জানিয়ে দিয়েছে  লংকা কেজি প্রতি ৪-৫ টাকার বেশি দাম মিলবে না।আর বাকি সব্জির মধ্যে প্রতি কেজি উচ্ছে ৬-৭ টাকা,,কুমড়ো ৩ টাকা ,পটল ২০-২৩ টাকা ও ঢেঁড়সের দাম ১৮-থেকে ২০ টাকার বেশি মিলবে না।১৩ জন আড়তদারের কেউই  সব্জির দাম একটুও বেশি বলছে না। আড়তে সব্জি বিক্রি করতে আসা রায়নার চাষি শেখ ইয়াকুব ,জামালপুরের কনকপুরের চাষি মথু রায় ,মধ্যম ঘোষ প্রমুখরা বলেন
,লকডাউন জারি হবার পর থেকে ক্রমশ তলানিতে পৌছে যাচ্ছে সব্জির দাম ।এই চাষীরা বলেন , লকডাউন ঘোষনার আগে তারা আড়তে প্রতি কেজি লংকা ২০- ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন । এছাড়াও পটল ৪০-৪৫ টাকা ও ঢেঁড়স ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন । অন্য সব্জিরও লাভজনক দাম মিলছিল ।চাষিরা বলেন ,লকডাউন ঘোষনার পর থেকে সব রকম  সব্জির দাম প্রতিদিন  তলানিতে নেমে যেতে থাকায় তাঁদের প্রভুত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে । 


চাষি শেখ ইয়াকুব বলেন , এক  বিঘা জমিতে লংকা চাষ করতে তাঁদের খরচ করতে হয়  ৮-৯ হাজার টাকা। এছাড়াও উচ্ছে কিংবা পটল চাষেও বিঘা প্রতি খরচ লাগে ১০-১২ হাজার টাকা ।জমিতে লংকা ফলার পর ৫ কেজি লংকা তোলার জন্য ক্ষেত মজুররা নেয়  ২৫ টাকা।আক্ষেপ প্রকাশ করে শেখ ইয়াকুব ও মধ্যম ঘোষ বলেন , এত টাকা খরচ করে লংকা চাষকরে এখন ৪ টাকা কেজি দরে লংকা বিক্রি করতে হচ্ছে ।চাষিরা বলেন , ‘লকডাউনের জেরে  সব্জির বাজারে যে এতবড় বিপর্যয় নেমে আসবে তা তাঁরা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি ।সব্জির দাম এইভাবে দিনের পর দিন তলানিতে  নামতে থাকলে কৃষকদের বিষপান করা ছাড়া আরকোন উপায় থাকবে না। ’ 


চাষিদের করুণ অবস্থা চলার কথা মেনে নিয়েছেন সালিমডাঙ্গার আড়তদাররাও ।শেখ পিন্টু,শেখ মর্তুজ আলি প্রমুখ আড়তদাররা বলেন , ‘লকডাউনে কাঁচা সব্জি ও আনাজ সহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহনে ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার ।কিন্তু তা সত্ত্বেও পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে বাইরের বড় পাইকেরদের কেউই  গাড়ি নিয়ে সব্জি আড়তে আসছে না।আড়তে এখনও প্রতিদিন ৭০-৮০ টন সব্জির আমদানি হলেও তা কেনার লোকনেই ।আর্ধেক সব্জিও বিক্রি হচ্ছে না। সেই কারণে দিনের পর দিন সব্জির দাম একেবারে তলানিতে নেমে যেতে থাকায় চাষিদের  প্রকৃতই মাথায় হাত পড়েগেছে । ’রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেন , ‘চাষিরা যাতে  আর্থিক ক্ষতির মুখে না পড়েন  সেই বিষয়টি সরকার দেখবে।যে যে সব্জি আড়তে এখন এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে সেগুলি নির্দিষ্ট করে  চাষি স্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

ছবি : মহাম্মদ খান ( সানি )





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।